ওসমানীনগরে প্রকাশ্যে ঘুষ দাবি করলেন সাব-রেজিস্ট্রার
“খাস কামড়ায়” হট্টগোল ও উত্তেজনা
শরীফ আহমদ চৌধুরী ওসমানীনগর(সিলেট) সংবাদদাতা ::
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-রেজিস্ট্রার মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে এক দলিলে ৮০ হাজার টাকা প্রকাশ্যে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।প্রকাশ্যে ঘুষ কেলেঙ্কারির এ ঘটনাটি গত ৩০ জুন সাব-রেজিস্ট্রারের বিশেষ কক্ষ(খাস কামড়ায়) ঘটলেও উপজেলা রেজিস্ট্রি কমপ্লেক্সজুড়ে ফাঁস হয়েছে ২ জুলাই সকাল ৯ টায় অফিস খুলার পর থেকে।অন্যদিকে জমির শ্রেণী ও প্রকৃত মূল্য আড়াল করে দলিলে কম মূল্য দেখিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন। তিনি বালাগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত হলেও (অতিরিক্ত দায়িত্বে) সপ্তাহে দুই দিন দায়িত্ব পালন করেন ওসমানীনগর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওসমানীনগর উপজেলার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়মিত কোনো সাব রেজিস্ট্রার না থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মোশারফ হোসেন ওসমানীনগর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে যোগদানের পর জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের জিম্মি করে জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন ও প্রকৃত বাজারমূল্য কম দেখিয়ে দলিল সম্পাদন করে কোটি-কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও এবার ঘটেছে সাব রেজিস্ট্রারকে চাহিদা মতো ঘুষ না দেওয়ার ফলে দলিল রেজিস্ট্রি না করার ঘটনা।
উপজেলার উসমানপুর গ্রামের(বর্তমান)সিলেট ভার্তখলা স্বর্নালী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মুহিব এহতেশাম।তিনি ৮ লাখ ২৪ হাজার টাকায় নিজের ১১ শতক বাড়ী বিক্রি করেন একই গ্রামের মৃত আকলিছ মিয়ার পুত্র শাহীন মিয়ার কাছে।গেল মাসের ৩০ জুন দেড়টায় শাহীন মিয়া রেজিষ্ট্রারি অফিসে দলিল রেজিষ্ট্রারি করার জন্য পে-অর্ডারের মাধ্যমে সরকারি ফি জমা দেওয়ার পর অফিসে অতিরিক্ত আরো ২ পার্সেন্ট ঘুষ প্রদান করে দলিল রেজিস্ট্রির জন্য উপস্তিত হন উপজেলার তাজপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে।
শাহীন মিয়ার দলিলটি সাব রেজিস্ট্রার মোশারফ হোসেন এজলাস কক্ষে পৌছার পর তিনি পাই-পাই করে দলিলটি যাচাইকরণ করে কোন দ্রুটি বেড় করতে পারেননি।দীর্ঘ যাচাইকরণ পর এক পর্যায়ে দলিল রেজিস্ট্রিতে অনিহা প্রকাশ করেন সাব রেজিস্ট্রার।এতে শাহীন মিয়া ও তার মনোনীত মুহরীর দলিল রেজিস্ট্রি না করার কারণ জানতে চাইলে তাদের “খাস কামড়ায়” যাওয়ার আহ্বান করেন তিনি।“খাস কামড়ায়”যাওয়ার পর অফিসের ২ পার্সেন্ট সহ তাকে অতিরিক্ত ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার বায়না ধরেন।২ পার্সেন্ট অফিসে দেওয়া আছে বলার পরও তিনি বায়নার ৮০ হাজার টাকা থেকে সড়ে আসেননি।অবশেষে দলিল রেজিস্ট্রি পক্ষ ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়।তাতেও সাব রেজিস্ট্রার দলিল রেজিস্ট্রিতে রাজি না হলে“খাস কামড়ায়”উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উভয়পক্ষ মারমুখী ভূমিকায় চলে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্তিতি শান্ত করলেও প্রায় ২ দিন আগের এ ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনাটি গতকাল রাত থেকে ফাঁস হওয়ার পর উপজেলা রেজিস্ট্রি কমপ্লেক্সজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।জনভোগান্তি রোধে অবিলম্বে এ সাবরেজিস্ট্রারের অপসারণ ও তদন্তসাপেক্ষে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।
দলিল রেজিস্ট্রি পক্ষের মনোনীত (মুহরীর) মো: মকবুল হোসেন জানান,দলিলে কোন ত্রুটি না থাকার পরও সাবরেজিস্ট্রার প্রকাশ্যে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।অনেক দর কষাকষির পর দলিল রেজিস্ট্রিপক্ষ ৩০ হাজার দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তিনি ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ পয়সাও কম হবেনা বলে অনড় থাকলে বিতরে হট্টগোল ও উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে তিনি নিজেই পুলিশ কল দেন।এবং পুলিশের সামনেই ঘুষের বিষয়টি উত্থাপিত হয়।কাজের স্বার্থে বিভিন্ন সময় তিনি নিজে সাবরেজিস্ট্রারকে অর্ধকোটি টাকার উপরে ঘুষ দেওয়ার দাবি করেন মো: মকবুল হোসেন।
এ বিষয়ে অভিযোক্ত সাবরেজিস্ট্রার মোশারফ হোসেন ব্যক্তিগত মুঠোফোন নাম্বারে একাধিকবার কল ও হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি এ প্রতিবেদককে ফিরতি জওয়াব না দিয়ে অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্য মো: মোনায়েম মিয়া বলেন সাব-রেজিস্ট্রারের সাথে একটি পক্ষের উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়,সেখানেই বিষয়টি সমাধান হলে কেউ আর অভিযোগ দেয়নি।বিস্তারিত সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে জানতে পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার জহুরুল ইসলাম জানান সরকারী ফি ছাড়া অতিরিক্ত কোন টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই।অতিরিক্ত ঘুষ গ্রহণের দাবিটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে সাবরেজিস্ট্রার মোশারফ হোসেন ওসমানীনগরে দায়িত্ব পালণকালে প্রতি লাখে তিন হাজার টাকা ঘুষ দাবি ও দলিল লেখকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিরোদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভোক্তভোগীরা
সাংবাদিক মোঃ মিন্টু মিয়া কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত