ভেড়ামারায় প্রবাসীর রোষানলে বিলীনের পথে শতবর্ষী পায়ে হাঁটার রাস্তাঃ নিরুপায় মহল্লাবাসী উপজেলা প্রশাসনের শরণাপন্ন
মোহন আলী স্টাফ রিপোর্টার কুষ্টিয়া।
ভেড়ামারার জুনিয়াদহ ইউনিয়নের জগশ্বর গ্রামের লম্বা পাড়ার নিরুপায় দরিদ্র জণসাধারণের একমাত্র চলাচলের পথ অবরুদ্ধ করার বিরুদ্ধে গ্রামবাসী এক গভীর ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। গতকাল ১২ জুলাই শনিবার, তারা তাদের আতঙ্ক আর উদ্বেগের কথা সাংবাদিকদের তুলে ধরেছেন। এইজন্য তারা প্রবাসী এরশাদ খা ও জগশ্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এ্যাডহক কমিটির আহবায়ক খলিলুর রহমানের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরেছেন। কোন উপায়ান্তর না দেখে,
নিরুপায় গ্রামবাসী ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলামের শরণাপন্ন হয়েছেন। ৪০ থেকে ৫০ পরিবারসহ গ্রামবাসীর যাতায়াতের রাস্তা বন্ধের প্রতিকার প্রসঙ্গে দিয়েছেন অভিযোগও।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জুনিয়াদহ ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের জগশ্বর লম্বাপাড়ার ৪০-৫০ ঘরের প্রায় ১৫০ বাসিন্দা ১৭১২-১৭১৭ দাগ ও ১৮০৫ দাগে বসবাস করে আসছেন প্রায় দেড়শ বছর ধরে। তাদের সহ এলাকার অন্যান্য জনগণের এই অংশে যাওয়ার একমাত্র চলাচলের রাস্তা
১৭১১ দাগের জগশ্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নামে সরেজমিনে থাকা ৩ শতক জায়গাটুকু। মূলত এই তিন শতক জায়গা, এই মহল্লার লোকজন চলাচলের জন্য প্রায় ১০০ বছর ধরে ব্যবহার করে আসছে। শুধু তাই নয়, এই এলাকার পেছনের যে মাঠ রয়েছে সেখানে যাওয়ার জন্যও এলাকাবাসী এই পথ ব্যবহার করে আসছে। যার দুই পাশে ১৭১১ ও ১৮১৮ দাগ, যা রয়েছে মালিকানা জায়গা। বিকল্প কোন যাওয়ার রাস্তা না থাকায়, তাই বাধ্য হয়েই তাদেরকে এই পথেই ব্যবহার করতে হয়।
ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে,
শতবর্ষী পায়ে হাঁটার এই রাস্তা স্কুলের জমি হলেও এর আগে স্কুল কখনো বিক্রি অথবা এওয়াজ রেজিস্টির মত সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে স্কুলটির এডহক কমিটির আহবায়ক খলিলুর রহমান সহ স্কুল কর্তৃপক্ষ কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে? তারা অভিযোগ করে বলেন,প্রবাসী এরশাদ টাকার গরমে এলাকাবাসীকে বিপদে ফেলানোর জন্যই এই জায়গাটি মূলত নিতে চেয়েছেন। আমরা শুনেছি,৫ শতক জমির বিনিময়ে তিনি মাঠে ১০ শতক জমি দিতে চেয়েছেন।এলাকাবাসীর দাবি, সরজমিনের যে তিন শতক জায়গা রয়েছে, ওই পরিমাণ জায়গা তারা নিতে অথবা এওয়াজ রেজিস্ট্রি করে দিতে প্রস্তুত আছেন। এই জায়গা কোনভাবে অন্য কেউ নিলে তাদের ভোগান্তির শেষ থাকবে না।
ভুক্তভোগী আমিরুল ইসলাম জানান, আমরা এই মহল্লায় প্রায় ৫০ টি পরিবারের ২০০ জন বসবাস করি। এদের একমাত্র চলার রাস্তা এই স্কুলে জমিটুকু।কিন্তু প্রবাসী এরশাদের রোষানলে পড়ে শতবর্ষী চলাচলের এই রাস্তার অস্তিত্ব বিলীনের পথে। আমরা অসহায় গ্রামবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের শরণাপন্ন হয়েছি। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও রাস্তা বন্ধ না হওয়ার দাবিতে অভিযোগও দিয়েছি।
আরেক ভুক্তভোগী অবেদ আলি বলেন, আমরা চার পুরুষ ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, আমাদের সামর্থ্য নেই,তারপরেও স্কুলের এই তিন শতকের বিনিময়ে যেটা দরকার আমরা সেটার ব্যবস্থা করব। আমরা মূলত প্রবাসী এরশাদের রোষানলের শিকার।
অসুস্থ হামিদুল আলী বলেন, আমরা ভূমিহীন পরিবারের মতো বসবাস করি। চলাচলের জন্য এই রাস্তাটুকু ছাড়া আর কিছুই নেই।
সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো, স্কুল কর্তৃপক্ষ রাস্তার এই জমি এওয়াজ রেজিস্ট্রি করার জন্য ইতিমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে এবং রেজিস্ট্রি অফিসেও গিয়েছে কিন্তু আমাদের জানায়নি। রেজিস্ট্রি হয়ে গেলে আমরা কোথায় যাব?
বয়সের ভারে নূর্য্য ফজিলাতুন্নেসা বলেন, জীবনভর এই রাস্তা দিয়েই আমরা চলাচল করে আসছি। কেউ কখনো বিক্রির কথা বলেনি। আজ বিক্রির কথা উঠছে কেন।
প্রবাসী এরশাদের কাছে তার বিষয়ে আনীত অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে গেলে, তিনি বাড়িতে থেকেও আমাদের সাথে কথা বলেননি। তার মোবাইলেও একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি তা ধরেননি।
জগশ্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, আমরা স্কুলের এই জায়গাটি মূলত বিনিময় করতে চেয়েছিলাম। যেহেতু ভুক্তভোগী এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেব।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী এলাকাবাসী এসেছিল রাস্তার বিষয়ে কথা বলার জন্য এবং তারা একটি অভিযোগও দিয়ে গেছে। পরবর্তীতে দুপক্ষের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় কিনা এ বিষয়টি আমরা আমলে নিয়েছি।