“অভাবের যুদ্ধে হেরে হাসপাতালেই ‘বন্দি’ হেলাল, প্রতিদিন বাড়ছে ১৫০০ টাকা”
আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ভালুকার এক পোশাক শ্রমিক মোঃ হেলাল উদ্দিন (৪০) দীর্ঘদিন হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার উপযোগী হলেও, বিল পরিশোধে অক্ষমতার কারণে এখনও ক্লিনিকে ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থায় রয়েছেন। প্রতিদিন তার নামে বাড়ছে অতিরিক্ত ১৫০০ টাকা করে বিল।
হেলাল উদ্দিন ভালুকা উপজেলার ভরাডোবা ইউনিয়নের রাংচাপড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং প্রয়াত রমজান আলীর ছেলে। তিনি গাজীপুরের মাওনা এলাকার একটি গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
গত ১১ জুলাই কর্মস্থলে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে প্রথমে তাকে ভালুকা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ১৫ জুলাই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হেলালকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে আইসিইউ না পেয়ে বাধ্য হয়ে তার স্ত্রী নাছরিন সুলতানা মুক্তা ময়মনসিংহ শহরের সায়েম ডায়াগনো কমপ্লেক্স অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করান।
অগ্রিম টাকা ছাড়াই হেলালকে সেখানে আইসিইউতে ভর্তি করা হয় এবং তিন দিন লাইফ সাপোর্টে রাখার পর তাকে এসডিও’তে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি সুস্থ, তবে বিল পরিশোধ করতে না পারায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়ছে না।
হেলালের স্ত্রী মুক্তা জানান, তাদের সংসার চলে হেলালের আয় ও তার টিউশনির টাকায়। সংসারে রয়েছে দুই ছেলে। বড় ছেলে সিলেট পলিটেকনিকে অধ্যয়নরত এবং ছোট ছেলে স্থানীয় বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। পরিবারটির একমাত্র সম্পদ মাত্র ৭ শতক ভিটের জমি।
তিনি বলেন, “বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে স্বামীর ওষুধের ব্যবস্থা করেছি। এখন তাকে বাড়ি আনার মতো টাকাও নেই। বুধবার (০৬ আগস্ট ২০২৫) পর্যন্ত বিল দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি দিনই ১ হাজার ৫০০ টাকা করে বাড়ছে।”
এ অবস্থায় মুক্তা দেশবাসী, সমাজের বিত্তবান ও মানবিক সংগঠনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
ক্লিনিকটির ম্যানেজার মনির হোসেন বলেন, “মানবিক কারণে হেলালকে আইসিইউতে ভর্তি করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো টাকা জমা দেওয়া হয়নি। সুস্থ হওয়ার পরও বিল পরিশোধ না করায় আমরা তাকে ছাড়তে পারছি না।”
এমন পরিস্থিতিতে অসহায় এক শ্রমজীবী পরিবারের জন্য মানবিক সহায়তা এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।