কুড়িগ্রামের উলিপুরে সমাজসেবা কর্মকর্তা সেজে প্রতারণা, জনতার হাতে যুবক আটক
রফিকুল ইসলাম রফিক, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ,
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার অসহায় জনগোষ্ঠীকে সরকারি সহায়তার আশ্বাস দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন এক যুবক। সমাজসেবা কর্মকর্তার ভুয়া পরিচয়ে ঘুরে বেড়িয়ে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার প্রলোভন দেখিয়ে সংগ্রহ করতেন জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য। অবশেষে এলাকাবাসীর সচেতনতায় ফাঁস হয় তার প্রতারণা-ধরা পড়েন জনতার হাতে।
প্রতারকের নাম মাইনুল ইসলাম (২২)। তিনি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ি ইউনিয়নের কিশামত মালতিবাড়ি এলাকার নুর হোসেনের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাইনুল নিজেকে সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। বিশেষ করে গ্রামের সহজ-সরল, দরিদ্র ও কম শিক্ষিত মানুষদের টার্গেট করতেন তিনি।
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারি বিভিন্ন সহায়তার কথা বলে হতদরিদ্র মানুষদের কাছ থেকে আইডি কার্ডের ফটোকপি, ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতেন। পরে এসব সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা।
প্রতারণার শিকার এক ভুক্তভোগী বলেন, “তিনি বলেছিলেন ভাতা পাইয়ে দেবেন, আইডি কার্ড আর ছবি নিয়ে গেলেন। তারপর আর যোগাযোগ নেই। পরে শুনি উনি অফিসের লোকই না।”
বৃহস্পতিবার ০৭ জুলাই সকালে বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে একই কৌশলে কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সময় স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা মাইনুলকে আটকে ফেলেন। পরে তাকে উলিপুর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে নিয়ে যান এবং লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দেখা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি কখনোই সমাজসেবা কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি প্রতারণার মাধ্যমে অনেককে হয়রানি করেছেন।”
ঘটনার সত্যতা যাচাই করে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা ও উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিল্লুর রহমান-কে জানানো হয়। পরে বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের সমাজসেবা কর্মচারী বিপুল মিয়া (৩০), পিতা আবুল হোসেন বাদী হয়ে উলিপুর থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন।
সমাজসেবা কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, মাইনুল ইসলামের প্রতারণার শিকার আরও অনেক ভুক্তভোগী রয়েছেন, যারা হয়তো এখনও চুপ করে আছেন বা বুঝতেই পারেননি যে তারা প্রতারিত হয়েছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, “এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে, যেন কেউ সহজে প্রতারিত না হন।”
এই ঘটনা শুধু একজন ব্যক্তির অপরাধ নয়; এটি একটি বড় সামাজিক ইঙ্গিতও দেয়-নিম্নআয়ের অসহায় মানুষদের পিছু টেনে ধরা দুর্বল ব্যবস্থাপনার। অশিক্ষা ও তথ্যের ঘাটতির সুযোগ নিচ্ছে প্রতারক চক্র।
এমন ঘটনায় সরকারি অফিস ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। তৃণমূল পর্যায়ে ভাতা বিষয়ক তথ্যের খোলামেলা প্রচার ও ফলোআপের ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
সতর্কতা বার্তা:
কোনো সরকারি সুবিধা পেতে কারো কাছে টাকা ও তথ্য দেওয়া আইনগতভাবে অপরাধ। সরকারি সব ভাতা ও সহায়তা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। সন্দেহজনক কেউ পরিচয় দিলে নিকটস্থ সমাজসেবা কার্যালয়ে বা থানায় অবহিত করুন।