“ছেলের খোঁজে দিশেহারা পিতা, ৬ মাস ধরে নিখোঁজ সৌদি প্রবাসী সোহরাব”
আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের কাচিনা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ সফির উদ্দিন গত ছয় মাস ধরে নিখোঁজ প্রবাসী ছেলে সোহরাব হোসাইনের খোঁজে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ছেলের কোনো সন্ধান না পেয়ে তিনি চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সোহরাব হোসাইন (৩৫) ২০০৭ সালের ২৯ জুলাই কাজের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে যান। তিনি ‘তানিয়া আল খাইজ ওয়াটর’ নামের একটি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ ২০২১ সালে দেশে এসে ছয় মাস অবস্থান করে পুনরায় সৌদিতে ফিরে যান।
গত রমজানের এক-দেড় মাস আগে সোহরাব সর্বশেষ মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। সে সময় তিনি ভালো আছেন বলে জানান এবং কিছু টাকা পাঠান। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। ছেলের খোঁজে পরিবার বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করলেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, সোহরাব সৌদি আরবের কারাগারে আছেন—এমন খবর পেয়ে তার বাবা মোঃ সফির উদ্দিন গত ২৪ এপ্রিল ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেন। তবে দীর্ঘ চার মাস পার হলেও সন্তানের খোঁজ পাননি তিনি।
সোহরাবের মা জাহানারা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“পুলাডা সৌদি গেছে মেলা বছর। কিছুদিন আগে টেহা পাঠাইছিল, কইছিল মন চাইলে খরচ কইরো। এরপর পাঁচ-ছয় মাস অইল কোনো খবর নাই। গ্রামের এক ছেরা কইছে আমার পোলা জেলো আছে। কিন্তু এখনো কোনো নিশ্চিত খবর পাই না। সরকারের কাছে দাবি, আমার পোলারে খুইজ্জা বাইর কইরা ফিরাইয়া দেউক।”
অসহায় পিতা সফির উদ্দিন বলেন,
“আমার ছেলে কোথায় আছে, কোন জেলে আছে—তা কিছুই জানতে পারছি না। আদৌ সে বেঁচে আছে কি না তাও নিশ্চিত নই। সরকারের কাছে একটাই দাবি, আমার ছেলের খোঁজ বের করে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক।”
এদিকে, সোহরাবের ছেলে ছাইম, যিনি দশম শ্রেণিতে পড়েন, বলেন,
“বাবা বিদেশ থেকে প্রায়ই ফোন দিতো, পড়াশোনার খবর নিতো। এখন ছয় মাস ধরে বাবার কোনো ফোন পাই না। আমরা সবাই খুব চিন্তায় আছি। সরকারের কাছে বাবার খোঁজ চাই।”
পরিবারটির একমাত্র ভরসা এখন সরকারের পদক্ষেপ। তারা প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন জানাচ্ছেন—অন্তত সোহরাব হোসাইনের বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা ও দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক।