পশ্চিমবঙ্গ মিড ডে মিল কর্মী ও যৌথ সংগ্রাম কমিটির ডাকে বিভিন্ন দাবী নিয়ে --নবান্ন অভিযান।
রিপোর্টার , সমরেশ রায় ও শম্পা দাস, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ,
আজ ২৬ শে আগস্ট মঙ্গলবার, ঠিক দুপুর বারোটায়, পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধন কর্মী ও পশ্চিমবঙ্গ মিড ডে মিল কর্মী এবং সারা বাংলা মিড ডে মিল কর্মী ইউনিয়ন এর উদ্যোগে বিভিন্ন দাবী নিয়ে কয়েক হাজার মিড ডে মিল কর্মী একত্রিত হয়ে নবান্ন অভিযান করলেন।
আজকের এই নবান্ন অভিযানে নেতৃত্ব দেন, রাজ্য সম্পাদিকা ইসমত আরা খাতুন, মধুমিতা ব্যানার্জি, নীলাঞ্জনা কর সহ অন্যান্যরা।
ঠিক দুপুর বারোটায়, তিনটি সংগঠনের ডাকা আজকের নবান্ন অভিযান এর উদ্দেশ্যে, মিছিল করে জমায়েত হন কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে, মিছিল আসে হাওড়া ও শিয়ালদা স্টেশন থেকে, প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার মিড ডে মিল কর্মী পায়ে পা মিলিয়ে বিভিন্ন দাবীর নিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে তারা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে জমায়েত হন, এবং একটা নাগাদ সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মিছিল শুরু করে এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে নবান্ন অভিযানের উদ্দেশ্যে এগোতে থাকলে, কলকাতা কর্পোরেশনের সামনে কয়েকশো পুলিশ ব্যারিকেড করে আটকে দেন তাদের মিছিল, অনেক আগে থেকেই প্রশাসনের তরফ থেকে ব্যারিকেট দেওয়া শুরু হয়। এবং প্রশাসনের অফিসাররা ব্যারিকেডের সামনে উপস্থিত ছিলেন।
মিছিল ব্যারিকেডের সামনে আসলে এবং মিছিলকে আটকে দিলে, মিড ডে মিল কর্মীরা , ব্যারিকেট ভাঙার চেষ্টা করেন এবং প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন, তাহারা বলেন আমরা ন্যায্য দাবী নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সহিত দেখা করতে চাই। আমাদের কেন আটকে দেওয়া হলো ,আর মুখ্যমন্ত্রী কেন আমাদের সাথে দেখা করছেন না বা আলোচনায় বসছেন না। কিসের এত ভয়, তবে আজ আপনাদের পরিষ্কার করে জানিয়ে দিতে চাই, যদি মুখ্যমন্ত্রী আমাদের দাবী না মানেন এবং আমাদেরকে মুখ্যমন্ত্রী সহিত দেখা করতে না দেওয়া হয়, এমনকি আমাদের ডেপুটেশন যদি মুখ্যমন্ত্রী কাছে বা সেক্রেটারীর কাছে না পৌঁছায়, আমাদের নবান্নতে না যেতে দেওয়া হয় , আমরা রাস্তা অবরুদ্ধ করে দেবো, আমরা রাস্তার উপর বসে পরবো, আমরা অন্য কারো হাতে ডেপুটেশন দেব না, প্রতিবারে আমাদেরকে ভাঁওতা দেওয়া হয়েছে । আর আমরা ভাঁওতা শুনতে চাই না, পুলিশ অফিসারদের সরাসরি জানিয়ে দেন,
আমাদের দাবী..... পুজোতে বোনাস দিতে হবে, দশ মাসের মজুরি আমরা নেব না, আমাদের মজুরি বারো মাস দিতে হবে। ২৫ জন ছাত্র ছাত্রী পিছু ন্যূনতম তিনজন রন্ধন কর্মী নিয়োগ করতে হবে, অবসরকালীন অনুদান আমাদের দিতে হবে, আমাদের সরকারি স্বীকৃতি ও ন্যূনতম সরকারি মজুরী দিতে হবে।, ছাত্র-ছাত্রীদের মাথাপিছু দৈনিক বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং সরকারি স্কুল বাঁচাতে হবে। আমাদেরকে দিয়ে কোনভাবে অন্য কাজ করানো চলবে না।
তাহারা বলেন পশ্চিমবঙ্গের সরকারি নথিভূক্ত 2.33 লাখ স্বনির্ভর দল মিলে যা প্রায় ৮ লাখ মিড ডে মিল প্রকল্পের বন্ধন কর্মী , কুড়ি বছরের অধিক লাখ লাখ ছাত্রছাত্রীদের দুপুরের টাটকা খাবার তুলে দিচ্ছেন, কেন্দ্রীয় সরকার ২০১১ সালে মাথাপিছু মাসিক এক হাজার টাকা বরাদ্দ করে রেখেছেন যার মধ্যে মাত্র ৬০০ টাকা কেন্দ্র দেয়। আমরা বহু আন্দোলন করার পর ২০২৪ সাল থেকে ২০০০ টাকা মাথাপিছু বরাদ্দ হয়েছে, কেন্দ্রের 600 ও রাজ্যের ১৪০০ টাকা। তাহারা জানান দেশের অধিকাংশ রাজ্য 3000 থেকে 12 হাজার টাকা পর্যন্ত মাথাপিছু দিচ্ছেন, এ রাজ্যে শুধু টাকার অভাব, তাও আবার 10 মাসের মজুরি দিচ্ছেন দুমাস দিচ্ছেন না। আমরা পুরো ১২ মাসের মজুরি চাই।। এমনকি তারা বলেন আমাদেরকে দিয়ে বাথরুম পর্যন্ত পরিষ্কার করানো হচ্ছে, শুধু তাই নয় খাবারের গুণমান অনেকটাই নিচে। এমনকি স্কুলের স্কুলে প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাব, নিয়োগ দুর্নীতি জনিত ছাঁটাই প্রভৃতি কারণে সরকারি শিক্ষা এক গভীর সংকটের মুখে সম্মুখীন হয়েছে।।
আমরা সরাসরি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী কে আবারো জানাতে চাই। যদি আপনি আমাদের দাবি পূরণ না করেন আগামী দিনে আমরা মিড ডে মিল কর্মী সমস্ত কাজ বন্ধ করে দেব,
আপনি খেলা মেলায় টাকা খরচা করতে পারছেন, মন্ত্রী নেতাদের মাইনে বাড়িয়ে চলেছেন, দুর্গা পূজোয় এক লাখ দশ হাজার করে দিচ্ছেন, অথচ যারা রোদে ঘামে জল ঝরে সারাদিন পরিশ্রম করে ছেলেদের মুখে অন্য রান্না করে তুলে দেন। তাদের দাবি পূরণ হচ্ছে না, তাহারা সবকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এমনকি ২০০০ টাকায় কার চলে, কোন পরিবারের সংসার চলতে পারে, আমাদেরও ছেলে-মেয়ে আছে, তাদের মুখে দুটো অন্ন তুলে দিতে হয়।, তাই আমরা বাধ্য হয়েছি এই আন্দোলন করতে। যদি আমাদের দাবী না মানেন, আগামী দিনে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাব। আমাদের ন্যায্য দাবী আদায় করে নেব।
সাংবাদিক মোঃ মিন্টু মিয়া কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত