ময়মনসিংহে ১৬৯৯ সালের প্রাচীন মুদ্রণযন্ত্রের সন্ধান
আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহ নগরীর মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোড এলাকায় ৩২৬ বছর পুরনো একটি মুদ্রণযন্ত্রের সন্ধান মিলেছে। সম্প্রতি পুরাকীর্তি সুরক্ষা কমিটি, ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রতিনিধি দল পরিদর্শনকালে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা যন্ত্রটির সন্ধান পান। গায়ে খোদাই করা তথ্যমতে মুদ্রণযন্ত্রটি নির্মিত হয় ১৬৯৯ সালে। কমিটির সদস্যরা এটিকে সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে মৃত্যুঞ্জয় স্কুল এলাকায় দেখা যায়, যন্ত্রটির দুটি অংশ খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে, আর ছাপাখানার জায়গাটিও অরক্ষিত। স্থানীয়রা জানান, ছাপাখানাটি ঠিক কবে বন্ধ হয়েছে তা জানা না গেলেও ৯০ দশকের শেষ দিকে এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
পুরাকীর্তি সুরক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ইউরোপে ১৫ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মুদ্রণশিল্পের প্রসার ঘটে। ১৪৫০ সালে জার্মান উদ্ভাবক জোহানেস গুটেনবার্গ ধাতব চলনশীল অক্ষরের মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পর এই প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয় গোয়ায়, ১৫৫৬ সালে পর্তুগিজদের মাধ্যমে। মুদ্রণযন্ত্রটি ময়মনসিংহে আসে পূর্বপ্রজন্মের প্রগতিশীল ব্যক্তিদের হাত ধরে, যা এ অঞ্চলের মুদ্রণ ইতিহাসের এক অনন্য নিদর্শন।
গবেষক স্বপন ধর জানান, ঐতিহাসিক তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৮৬৬ সালের দিকে হরচন্দ্র চৌধুরী শেরপুর থেকে মুদ্রণযন্ত্রটি ময়মনসিংহে নিয়ে আসেন। ১৯৪৭ সালে মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অনাথ বন্ধু গোহ তার প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানায় যন্ত্রটি ব্যবহার শুরু করেন। পরে এটি গফরগাঁওয়ের মাওলানা পাঁচবাগীর হাতে যায় এবং স্বাধীনতার পর পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক পোস্টার ও সংবাদপত্র ছাপাতে ব্যবহৃত হয়।
স্থানীয় সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা মনে করেন, মুদ্রণযন্ত্রটি শুধু একটি যান্ত্রিক বস্তু নয়, বরং ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিকতা ইতিহাসের অংশ। তারা দ্রুত সংরক্ষণ ও প্রত্নতাত্ত্বিক সুরক্ষার দাবি জানিয়েছেন।