উপজেলা প্রশাসনের অফিসপাড়ায় অফিসার শুন্য! সাধারণ জনগণ হয়রানি আর পেরেশানিতে!
এম. এস. আই শরীফ, ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে উপজেলা প্রশাসনের অফিসপাড়ায় সিংহভাগই অফিসার নেই! যারা আছেন তারা অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত। প্রশাসনিকক কাজের ব্যাঘাতে হয়রানিতে পড়েছে স্থানীয় জনসাধারণ ও অফিসিয়্যাল বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ! দেখার কেউই নেই! সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ্যের দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মতামত দিয়েছেন সচেতনমহল!
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির মধ্যে সার্বিকক্ষেত্রেই অবহেলিত। উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। আর এ জেলার ৫টি থানার মধ্যে ছোট্ট একটি উপজেলার নাম ভোলাহাট। মান্দাত্তা আমল থেকেই এ উপজেলাটির সার্বিকক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বললেই চলে। শিক্ষাক্ষেত্রে আগের তুলনায় হার বাড়লেও পরিবর্তন আসেনি মানুষের মনমানসিকতার। একে-অপরের প্রতি হিংসে-বিদ্বেষ যেনো লেগেই রয়েছে।
ভোলাহাট উপজেলা পরিষদ সৃষ্টিলগ্ন থেকেই চলে আসছে, ভোলাহাট উপজেলা নাকি সাসপ্যান্ড এরিয়া। লোকমুখে শুনা যায়, উপজেলা প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলী হয়ে আসেন একমাত্র শাস্তি খাটার জন্য। বর্তমান উপজেলা প্রশাসনের ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ অফিসারের পদের মধ্যে ১৫টি পদে অফিসার রয়েছেন অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত। অতিরিক্ত দায়িত্বে অফিসারগণ অন্য উপজেলার মূল দায়িত্বে থাকায় সপ্তাহে দু-একদিন অফিস করেন।
আমরা মানুষ এমর্তের সকলকিছু ভাল-মন্দ, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সবই বুঝি। কার্যক্ষেত্রে বুঝি ও করি তার উল্টোটা। একজন জ্ঞানবান ও সচেষ্ট প্রকৃত মানুষ তার বিবেকের কথা উপলব্ধি করলেই মূলকর্মটাই করবে সে। কিন্তু বিতারিত শয়তানের অনুকরণ করলে সে-ই ব্যক্তির দ্বারা সমাজের উন্নয়ন তো দূরের কথা জাতি তাঁকে ঘৃণার চোখে দেখবে। আর তা-ই ঘটছে বর্তমান সমাজে।
ভোলাহাট উপজেলা প্রশাসনের অফিসপাড়ার চালচিত্র বর্তমান উপজেলা প্রশাসনের ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ পদে ১০টি রয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে। আর ১৫টি পদে যথারীতি রয়েছে ফাঁকা অতিরিক্ত দায়িত্বে অন্য উপজেলার। এ অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। বুধবার (২৫ আগষ্ট ২০২৫) সকালের দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন, উপজেলার জনসাধারণের একমাত্র চিকিৎসার কেন্দ্রবিন্দু ভোলাহাট স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরটি। যাকে বলা হয় টিএইচও বা ইউএইচও।
দীর্ঘদিন ধরে নেই উপজেলা ভূমি কমিশনার। মাঝেমধ্যে আসলেও কোন অলৌকিক ভাবে বিদায় নেন। এই এসি ল্যাণ্ড পদে বেশীরভাগই সময় দায়িত্ব পালন করে থাকেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার। একেতো উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব তথা গোটা উপজেলার ভালোমন্দের ভাগিদার তিনি। আরেকদিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে মাথার ঘাম পাঁ’য়ে ফেলে খেটেই চলেছেন এসিল্যাণ্ডের দায়িত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে। সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাথা নেই।
অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসনের আরেকটি পদেও দীর্ঘ সময় ধরে ফাঁকা উপজেলা পরিসংখ্যাণ অফিসার। সবার মনে হয় উপজেলায় পরিসংখ্যান অফিস নেই বললেই চলে। সবমিলিয়ে উপজেলা প্রশাসনের অফিসপাড়ায় যেনো ঝিমিয়ে পড়ার উপক্রম। বর্তমান অফিসপাড়ায় তাকালে একমাত্র উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ই সার্বিকক্ষেত্রেই চলমান।
উপজেলা প্রশাসনের অফিসপাড়ায় যেপদগুলি শুন্য রয়েছে-সহকারী ভূমি কমিশনার, উপজলা নির্বাচন অফিসার, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক অফিসার, পিআইও, টিএইচও, সমবায়, মহিলা বিষয়ক, মৎস্য, সাবরেজিস্টার, আনসার-ভিডিপি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, পরিসংখ্যান, বনবিভাগ ও রেশম বোর্ড সেরিকালচার।
এ ব্যাপারে তিন তিনটি দায়িত্বে নিয়োজিত উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রশাসক ও এ্যাক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ মনিরুজ্জামান-এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উক্ত দপ্তর গুলোয় কর্মকর্তা না থাকায় সাধারণ মানুষ যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জেলার কর্মকর্তা বা পার্শ্ববর্তী উপজেলার কর্মকর্তা এ উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকায় সপ্তাহে ১ দিন হয়তো আসে। যেক্ষেত্রে জেলার কোন কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন যেমন মাধ্যমিক শিক্ষা ও সমবায় দপ্তর তারা একেবারেই আসে না। এ বিষয়ে জেলার সমন্বয় মিটিং এ আমি আলোচনা করেছি কিন্তু সমাধান পাওয়া যায়নি বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।
ছবিক্যাপশনঃ ভোলাহাট উপজেলা প্রশাসন ভবন ও হাসপাতালের দৃশ্য।