ভিক্ষা নয়, সম্মানজনক জীবনের পথে প্রতিবন্ধী ফাতেমা
গোকুল চন্দ্র রায়, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী, বয়স ৭৫ বছর। দুটি পা প্রায় অচল। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে একসময় নেমেছিলেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। আজ সেই পথ ছেড়ে সম্মানের সঙ্গে দোকান চালিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের দামাইক্ষেত্র গ্রামের ফাতেমা বেওয়া।
গত রমজান ঈদে স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি টিনের ঘর এবং ছোট একটি দোকান করে দেওয়া হয় ফাতেমাকে। সেই ঘর ও দোকানে একাই বসবাস ও ব্যবসা করে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
ভূমিহীন ও গৃহহীন ফাতেমা বর্তমানে সিরাজুল ইসলামের জমিতে এলাকাবাসীর সহায়তায় নির্মিত ঘরে বসবাস করছেন। তাঁর দোকানে প্রতিদিন গড়ে ১৫০-২০০ টাকার মতো বিক্রি হয়। এই সামান্য আয়ে তিনি কোনোমতে দিন চালান। অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে পারেন না, তখন স্থানীয়দের সহযোগিতার দিকেই তাকিয়ে থাকেন।
ফাতেমা জানান, এলাকাবাসীর অনুদানে আমাকে একটি টিনের ঘর দিয়েছে। তারেক নামে এক যুবক দোকানে কিছু মালামাল তুলে দিয়েছে। এই দোকানের আয় দিয়েই কোনোমতে বেঁচে আছি। আমার তিন মেয়ে, কষ্ট করে তাদের মানুষ করেছি ও বিয়ে দিয়েছি। তারা কেউ তেমন খোঁজ নেয় না। সরকার যদি একটি ঘর এবং কিছু অর্থ সহায়তা করে, তাহলে চিকিৎসা ও দোকানে আরও কিছু মালামাল তুলতে পারতাম।”
ওই এলাকার মোঃ রেজাউল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ফাতেমা আগে ভিক্ষা করে দিন চলাতেন। এখন আর সে পেশায় নেই। এলাকার কিছু যুবক উদ্যোগ নিয়ে দোকান করে দিয়েছে। এটা খুবই প্রশংসনীয়।”
গ্রামের বাসিন্দা নুরজাহান বেওয়া বলেন, “তার নিজের কোনো জায়গা নেই। অন্যের জমিতে টিনের ঘরে থাকেন। সরকার যদি স্থায়ীভাবে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে, তাহলে তার একটা স্থায়ী ঠিকানা হবে।”
আরেকজন প্রতিবেশী শিরিন আক্তার জানান, একজন প্রতিবন্ধী মহিলা কীভাবে এত কষ্ট করে তিনটা মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে, এটা ভাবলেই চোখে পানি চলে আসে।
এ বিষয়ে নিজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনিসুর রহমান (আনিস) বলেন, “ফাতেমা একজন সংগ্রামী নারী। স্বামী মারা যাওয়ার পর মাঠে-ঘাটে কাজ করে তিনটি সন্তান বড় করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে বয়স্ক ভাতা ও ভিজিএফ এর সহায়তা দেওয়া হয়। তবে সমাজের সকলের উচিত তার পাশে দাঁড়ানো।”
বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ তানভীর আহমেদ বলেন, “ফাতেমা বেওয়ার মতো সংগ্রামী মানুষদের পাশে থেকে সম্মানজনক জীবনযাপনের সুযোগ করে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে, যাতে তিনি আরও আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারেন।”