বিএনপি নেতার কাণ্ড! তিন কোটি টাকা পাঠিয়েছিলেন বোনের স্বামীকে, আজ সেই মানুষই মারছে তাঁর বোনকে
মোঃসুলতান মাহমুদ। গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি।
গাজীপুরে নির্যাতনের শিকার এক নারী, বোনের প্রবাসী ভাইয়ের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন অভিযুক্ত স্বামী।
একজন ভাই ছিলেন প্রবাসে। দীর্ঘ সময় ধরে হাড়ভাঙা পরিশ্রমে উপার্জন করেছেন টাকা। সেই কষ্টের টাকা দিয়েছিলাম ছোটবোনের স্বামীর হাতে—বিদেশে ব্যবসা গড়ার জন্য। আশায় ছিলেন, বোনটা ভালো থাকবে, স্বামী সংসার করে উঠবে। কিন্তু সেই মানুষটাই আজ স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করছেন। নিরাপত্তার অভাবে এখন ভাইয়ের বাড়িতেই আশ্রিত হয়েছেন ছোটবোন।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মো. রাসেল মোড়ল (৪৫)। তিনি উপজেলার বরমী ইউনিয়নের পাঠানটেক গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান মোড়লের সন্তান।
রাসেলের বিরুদ্ধে শ্রীপুর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন। রাসেলকে স্বাবলম্বী করেছেন পারভীনের বড় ভাই, প্রবাসী শরীফ খান।
শরীফ খান বলেন, “আমি নিজে প্রবাসে ছিলাম, এখনও আছি। কষ্ট করে টাকা রোজগার করে রাসেলকে দিয়েছি সৌদিতে, যাতে সে ব্যবসা গড়ে তুলতে পারে। কখনও ২০ লাখ, কখনো ৫ লাখ, আবার ১০ লাখ—এইভাবে ধাপে ধাপে প্রায় তিন কোটি টাকা দিয়েছি। আজ সেই মানুষটাই আমার বোনের জীবন তছনছ করে দিচ্ছে।”
শাহনাজ পারভীনের সঙ্গে রাসেল মোড়লের বিয়ে হয় প্রায় ২২ বছর আগে। তাদের সংসারে রয়েছে তিনটি সন্তান। সংসারের শুরুতে রাসেলকে বিদেশ পাঠানোর জন্য বড় ভাই শরীফ খান সহযোগিতা করেন। ব্যবসা বাড়াতে প্রয়োজনীয় অর্থও এককভাবে দেন তিনি।
শুধু ব্যবসার জন্য নয়, শরীফ খানের টাকায় বরমী এলাকায় জমি কিনে বাড়িও নির্মাণ করেন রাসেল মোড়ল।
দেশে ফিরে বদলে যান রাসেল! শেখ হাসিনার সরকারের পতনের কিছুদিন আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন রাসেল মোড়ল। ফেরার পর বিদেশে আর যাননি। সৌদির ব্যবসায় লোকসান হলে তার দায় চাপাতে থাকেন স্ত্রী ও স্ত্রীর ভাইয়ের ওপর।
এরপরই শুরু হয় রাসেলের অবনতি। নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন—বিশেষ করে ইয়াবা সেবনে। পাশাপাশি হারান বরমী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতির পদ। এরপর থেকে নিয়মিত মাদক সেবনের পর স্ত্রীকে মারধর করতে থাকেন। সন্তানদের সামনেই চলত অমানবিক নির্যাতন।
একসময় নির্যাতনের মাত্রা সহ্যের বাইরে চলে গেলে শাহনাজ পারভীন স্বামীর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নেন ভাই শরীফ খানের বাড়িতে।
শুধু স্ত্রী নয়, ভয় ও হুমকির শিকার বড় ভাইও। শরীফ খান বলেন, “রাসেল শুধু আমার বোনকে মারছে না, আমাকেও প্রতিদিন গালাগাল করছে, ফোনে হুমকি দিচ্ছে। এখন সে এমনভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে যে, কারও কথা শোনে না। এলাকায় ভয়ভীতি ছড়ায়।”
তিনি আরও বলেন, “টাকা চাইলেই বলে, কিছু নেয়নি। অথচ তিন কোটি টাকা আমি দিয়েছি—কখনো ব্যবসার জন্য, কখনো বাড়ি বানাতে। সব ছিল আমার নিজের কষ্টার্জিত টাকা।”
ভুক্তভোগী শাহনাজ পারভীন শ্রীপুর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন—তাঁর স্বামী রাসেল ইয়াবা সেবন করেন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন, এমনকি তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। রাসেল তাঁর ভাইকেও নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
“অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এটি শুধু একটি নির্যাতনের ঘটনা নয়। এটি একটি ভাইয়ের স্বপ্নভঙ্গের গল্প—যেখানে আত্মত্যাগ, আস্থা আর ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে পাওয়া যায় সহিংসতা আর অবজ্ঞা। পরিবার ও সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।